গত বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৪২ শতাংশ রোগী ছিলেন নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ। আর ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ ছিল না ৩২ শতাংশ রোগীর। এ কারণে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরুতে দেরি হওয়ায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন রোগীরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মৃত্যু পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর ভয়াবহ বছর ছিল ২০২৩। সে বছর মারা গিয়েছিল এক হাজার সাত শ জনের বেশি মানুষ। এর আগে এত মৃত্যু কখনও হয়নি।
এত মৃত্যুর কারণ খুঁজতে রাজধানীর সাতটি সরকারি ও ছয়টি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা হয় মারা যাওয়া ৯৩ জন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, তাদের ৫৮ ভাগ রোগী হাসপাতালে ভর্তির সময় ডেঙ্গু পজিটিভ ছিলেন। বাকি ৪২ ভাগের ডেঙ্গু ধরা পড়েনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক শেখ দাউদ আদনান ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে বলেন, ‘জ্বর এলে সেটাকে অবহেলা না করে হাসপাতালে গিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করানো উচিত। সময় থাকতে টেস্ট করালে রিপোর্ট যা আসুক না কেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়। গত বছর অনেকেই দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে মারা গিয়ছিল।’
এক সময় ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ ছিল জ্বর। এখন আরও অনেক লক্ষণ বেড়েছে। ২০২৩ সালে মারা যাওয়া রোগীদের ৩২ ভাগেরই ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ ছিল না। ডায়রিয়া, কাশির মতো লক্ষণ নিয়েও ভর্তি হন অনেকে। সুনির্দিষ্ট লক্ষণ না থাকায় সন্দেহ করেন না রোগীরা। ফলে চিকিৎসার বাইরে থাকেন তারা। ততক্ষণে জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় আর বাঁচানো সম্ভব হয় না রোগীদের। বেশিরভাগই মারা যান হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রথম দুই দিনেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘ডেঙ্গুর যে লক্ষণগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটিও যদি কারো শরীরে দেখা দেয় তাকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে হবে। আর তা না হলে রোগীকে দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এক ঘণ্টা পরপরই ড্যামেজ হয়ে যায় এক একটি অরগ্যান । যেমন যদি কোনো ডেঙ্গু রোগী দেরি করে চিকিৎসা নিতে আসেন তখন যদি দুটি অরগ্যান ড্যামেজ হয়ে যায়, তাহলে সেই রোগীদের ৪০ শতাংশেরই মৃত্যু হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। তিনটি অরগ্যান ড্যামেজ হলে ৭৫ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। সুতরাং লক্ষণ দেখা যাওয়ার পর যতই সময়ক্ষেপণ হবে ততই বাড়বে মৃত্যুর শঙ্কা।’
এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় তিন হাজার রোগী। মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের।
THE BUSINESS WORLD
0 Comments