রাসেলস ভাইপার কামড় দিলেই কি রোগী মারা যায়?
- Get link
- Other Apps
বাংলাদেশের বেশকিছু জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সাপটি নিয়ে যে মাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে তা কতটা যৌক্তিক?
এ বিষয়ে সাপ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসেলস ভাইপার সাপ কামড় দিলে তার চিকিৎসা আছে। সময়মত চিকিৎসা নিতে পারলে মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসে।
বেসরকারি সংস্থা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে, বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপার সবচেয়ে বিষধর কিংবা প্রাণঘাতী সাপ নয়। বরং সাপের কামড়ে দেশে যত মানুষ মারা যায়, তার অর্ধেকই পাতি কেউটে সাপের কামড়ে। তবে সময়মত চিকিৎসা না নিলে রাসেলস ভাইপারের কামড়েও মৃত্যু হতে পারে।
বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সারাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম (সাপ কামড়ালে রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়) আছে। হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সাপে কামড় খাওয়া রোগীর শরীরে দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিতে পারলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলো বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. আবু সাইদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান সাপ বিষয়ে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে সুপরিচিত। তারা দুইজন বাংলাদেশের সাপ ও সর্প দংশন প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বইটির রচয়িতা। তারা বলেছেন যে, রাসেলস ভাইপার নিয়ে যেভাবে আতঙ্কের কথা বলা হচ্ছে, সেটি নিতান্তই ভয় থেকে এবং এটি অতিরঞ্জিত।
গবেষক মো. আবু সাইদ বলেন, “রাসেলস ভাইপার কামড় দিলেই রোগী মারা যায় এটিও সত্য নয়, বরং রোগী সহজে মারা যায় না। ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টার আগে সহজে রোগী মারা যায় না। বাংলাদেশে এ সাপের কামড়ের পর ১৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিল এমন তথ্যও আছে।”
বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি ডা. মো. আবুল ফয়েজ “সাপের দংশন ও এর চিকিৎসা” নিয়ে বই লিখেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “গোখরো সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি।”
এই চন্দ্রবোড়া সাপটিই হলো রাসেলস ভাইপার। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায়, বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অধ্যাপক ফরিদ আহসানের মতে, “রাসেলস ভাইপার কামড়ালে ১০০ মিনিটের মধ্যে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলে ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।”
মো. আবু সাইদ বলেন, “কোবরা বা কেউটে কামড়ালে টেরও পাওয়া যায় না অনেক সময়। কিন্তু রাসেলস ভাইপার কামড় দিলে জায়গাটা সঙ্গে সঙ্গে ফুলে যায় এবং সাপটি সাথে সাথেই চলে যায় না। সেজন্য কামড় দেওয়ার পর সাপটা দেখা যায় বলে রোগী বা অন্যরা নিশ্চিত হতে পারে। একজন চিকিৎসক দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে পারেন। সেটি হলে ঝুঁকিও কমে যায়। এ কারণেও এটি অন্য বিষধর সাপের চেয়ে কম আতঙ্কের।”
The Business World
- Get link
- Other Apps
Comments
Post a Comment