কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। এটি ওয়াজিব বিধান। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)
কোরবানির পশু নির্ধারিত। ছয় প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি করা যায়। সেগুলো হলো- গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা ও উট। অন্যান্য পশু দিয়ে কোরবানি নাজায়েজ। গরু, মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে একটি পশুতে সর্বাধিক সাতজন পর্যন্ত অংশীদার হওয়া যাবে, চাই একই পরিবারের সদস্য হোক বা একাধিক পরিবারের। (নুখাবুল আফকার: ১২/৫৩২, মিরকাত: ৩/১০৮০)
কিছু লোককে বলতে শোনা যায়, যে পশুতে সাতজন শরিক হতে পারে, তাতে শরিকের সংখ্যা বেজোড় হওয়া জরুরি। সুতরাং একটি গরুতে এক, তিন, পাঁচ বা সাতজন শরিক হতে পারবে; দুই, চার বা ছয়জন শরিক হতে পারবে না। এ ধরণের কথা সম্পূর্ণ ভুল। বরং সঠিক কথা হলো- একটি বড় পশুতে দুই থেকে সাত পর্যন্ত যেকোনো সংখ্যক শরিক একত্র হয়ে কোরবানি করা জায়েজ। এতে কোনো বাধা নেই।
‘উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (মুসলিম: ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭)
শরিকের সংখ্যা জোড় না হয়ে বিজোড় হওয়ার মাঝে আলাদা কোনো ফজিলতও নেই যে, যার কারণে বিজোড় সংখ্যক শরিকের জন্য উৎসাহ দেওয়া যায়। আসলে এ ধরণের কোনো বক্তব্য হাদিসে নেই। হাদিসের ভাষ্য হলো- বড় পশুতে শরিকে কোরবানি করা যাবে এবং সর্বোচ্চ ৭ জন পর্যন্ত অংশীদার হতে পারবে। (দ্র: সহিহ মুসলিম: ১৩১৮; তিরমিজি: ৯০৬)
অতএব, শরিকের সংখ্যা জোড় বা বিজোড় হওয়া নিয়ে শরিয়তের কোনো প্রশ্ন নেই। শরিকে কোরবানির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো দেখতে হয় সেগুলো হলো- সব শরিকের নিয়ত সহিহ আছে কি না। কারণ, কারো নিয়ত অশুদ্ধ হলে অন্য শরিকদের কোরবানিও সহিহ হবে না। আবার এক শরিকের কোরবানি হারাম টাকায় হলে অন্য শরিকদের কোরবানিও সহিহ হবে না। তাই শরিক নির্বাচন করতে হয় প্রত্যেককে ভালোভাবে জেনে-বুঝে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮; কাজিখান: ৩/৩৪৯; সহিহ মুসলিম: ২২১৫)
আবার, প্রত্যেক শরিকের অংশ সমান হওয়া জরুরি। অন্যথায় কোরবানি শুদ্ধ হবে না। ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ‘সাতজনে মিলে কোরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানিই সহিহ হবে না।’ (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭)
শরিকের ক্ষেত্রে মূলত এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। জোড়-বিজোড় সংখ্যা বিবেচ্য নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সহিহ শুদ্ধভাবে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
THE BUSINESS WORLD
0 Comments