মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে থাকেন বাগেরহাটের কবির হোসেন। দেশে থাকা স্ত্রী সন্তানের ভরণ পোষণের জন্য স্ত্রীর একাউন্টে প্রতি মাসে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান তিনি। এছাড়া রোজার ঈদ ও কোরবানিতে ছোট ভাই-সহ নিকট আত্মীয়দের একাউন্টেও উপহার হিসেবে টাকা পাঠান তিনি।

ঈদ কিংবা উৎসবে মি. হোসেন তার ছোট ভাই মিজানুর রহমানের একাউন্টেও টাকা পাঠাতেন, তবে এতে কোনও কর দিতে হত না মি. রহমানকে।


কিন্তু নতুন বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মা ছাড়া অন্য কাউকে টাকা পাঠালে তার ওপর কর বসবে।


এর আগে ভাই-বোন কিংবা নিকট আত্মীয়-সহ যে কারো একাউন্টে বিনা করে টাকা পাঠানোর সুযোগ ছিল। নতুন বাজেটে রেমিট্যান্স পাঠানোর সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনার কারণে এই সংকট তৈরি হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বলছে, বিদেশ থেকে এই পাঠানো অর্থ আয় হিসেবে গণ্য হবে। যে কারণে এর ওপর কর প্রদান করতে হবে গ্রহীতাদের। বছর শেষে আয়কর রিটার্নে করদাতাকে তা দেখাতে হবে।


এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো নিয়ে অনেক ধরনের দুর্নীতিও হয়, নতুন বাজেটের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সেটি বন্ধ হবে।"

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এনবিআরের এই প্রস্তাব ভাল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে কিছুটা জটিল করতে পারে।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমি মনে করি এটা ট্যাক্স রেট বাড়ানোর জন্য করা হয়েছে। তবে নতুন এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে ট্যাক্স রেটটা বাড়বে। ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া কমবে।"

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে এই বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও এটি এখনো কার্যকর হয়নি।

ব্যাংকগুলোকেও এ ধরনের কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলেও বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক।

 


যাদের কাছে টাকা পাঠালে কর চাপবে

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএইটি-র তথ্য মতে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি।


মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশে আসে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী কর্মীরা এই রেমিট্যান্সের টাকা স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তান, ভাই-বোন কিংবা নিকট আত্মীয় কিংবা বন্ধু বান্ধবের ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে থাকেন।


বর্তমান আইন অনুযায়ী, ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে তাদের পাঠানো এই টাকা রেমিট্যান্স হিসেবেই ধরা হয়।


বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী, কিংবা সন্তানদের অনেকেরই নিজ নামে ব্যাংক একাউন্ট নেই। সে কারণে অনেকেই নিজ পরিবারের সদস্য ছাড়া নিকট আত্মীয়দের একাউন্টে এই টাকা পাঠিয়ে থাকেন।


নতুন বাজেটের প্রস্তাব অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও মা-বাবা ছাড়া আর কারো একাউন্টে টাকা পাঠালে সেটিকে উপহার হিসেবে ধরা হবে। এবং তার ওপর কর বসবে।

উপহার পেলে বছর শেষে আয়কর রিটার্নে করদাতাকে তা দেখাতে হবে। এমনকি উপহারদাতাকেও তাঁর রিটার্নে উপহার দেওয়ার বিষয়টি জানাতে হবে। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স উপহার হিসেবে এলে সেটিও করের আওতায় পড়বে।


অর্থনীতিবিদ মি. মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দান চ্যারিট্যাবেল অথরাইজ ফান্ডে হলে সেটা ট্যাক্সের আওতায় আসবে না। অন্যথায় ট্যাক্সের আওতায় আসবে।"


এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মি. মজিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটা উপহার হিসেবে আসুক আর দান হিসেবে আসুক কিংবা অন্য যেভাবেই আসুক, যার কাছে আসছে তার সম্পদ বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণেই এই কর দিতে হবে। উপহারের নামে কেউ যদি লাখ লাখ টাকা পাঠায় সেটিও তো সরকারকে দেখতে হবে।"



The Business World